Header Ads

Header ADS

হজ্জ : বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের প্রতীক। আমাদের জবাব

 হজ্জ : বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের প্রতীক

حَامِدًا وَّمُصَلِّيًا وَمُسَلِّمًا اَمَّا بَعْدُ وَ اَذِّنْ فِی النَّاسِ بِالْحَجِّ یَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّ عَلٰی كُلِّ ضَامِرٍ یَّاْتِیْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِیْقٍۙ ۝۲۷

وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمُ اَلْمُسْلِمُونَ كَجَسَدٍ وَاحِدٍ، إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ، اشْتَكَى كُلُّهُ، وَإِنِ اشْتَكَى، رَأْسُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ اَوَ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ ـ

হজ্জ আল্লাহ্প্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্যতম একটি পথ। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটি ফরয বিধান, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

হজ্জে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, যা অন্য কোনো ইবাদতে একসঙ্গে নেই। হজ্জ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও সাম্যের প্রতীক।

এ লক্ষ্যেই পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘পবিত্র কাবা শরীফের হজ্জ করা সব মুসলমানের কর্তব্য, যারা সেখানে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। -আলে ইমরান : ৯৭

আলোচ্য আয়াতের শেষ বক্তব্যটি হচ্ছে, যারা সেখানে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। এখানে এই ‘সক্ষমতা’ দ্বারা আর্থিক ও শারীরিক উভয় দিকের সামর্থ্যের কথা বলা হয়েছে।

হজ্জ : বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের প্রতীক

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ্য, প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানবান প্রত্যেক মুসলিম নর—নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরয। হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও যারা হজ্জব্রত পালন করেন না, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ইহুদি—খ্রিস্টানদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের।

হাদীস শরীফে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কাবা শরীফ সহজভাবে জিয়ারত করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করে না, এমন ব্যক্তির মৃত্যু হবে ইহুদি ও খ্রিস্টানের মতোই।’ -বুখারি শরীফ

পক্ষান্তরে সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বিশুদ্ধ মকবুল একটি হজ্জ পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যকার সব বস্তু থেকে উত্তম। বেহেশত ছাড়া আর কোনো কিছুই এর বিনিময় হতে পারে না।’ -বুখারি ও মুসলীম

বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববন্ধন সৃষ্টিতে হজ্জের গুরুত্ব¡ সীমাহীন। হজ্জের সময় পথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানরা একত্র হয়ে জাতিভেদ, বর্ণভেদ ভুলে একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে আঁকড়ে ধরো, পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’

হজ্জ মুসলমানদের মাঝে আন্তর্জাতিক ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে। হজ্জের এ মহাসম্মেলন যেমন মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্যের প্রেরণা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্যের সূচনা করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এক ইসলামেরই পতাকাতলে, অপরদিকে তেমনি এটি মুসলমানদের ঈমানি শক্তিকে বৃদ্ধি করে, আত্মরক্ষার চেতনা জাগায় এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার দায়িত্ববোধের জন্ম দেয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস اَلْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبيان মুমিন মুমিনের জন্য দেয়ালের মতো, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। মুসলমানদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দূর করে সবার সমন্বয়ে গঠন করে একটিমাত্র জাতি।

মূলত দ্বিধাবিভক্ত মুসলমানদের একই পতাকা তলে পরিচালনার এটাই এক মোক্ষম উপায়। কিন্তু আমরা হজ্জের এ মহান শিক্ষাকে কি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি? কাবাকেন্দ্রিক এই আন্তর্জাতিক মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে কেনো আমরা মুসলমানদের যাবতীয় জাতীয় সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করি না?

হজ্জের এ মহান শিক্ষাকে সামনে রেখে মুসলমানদের অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। আজকের এই মুসলমানদের খোদাদ্রোহীশক্তি মোকাবিলায় সর্বাত্মক জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতে, হজ্জের মহোত্তম ঐক্য প্রেরণাকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।

মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহ পাকের এক মহান বিধান হওয়ার পাশাপাশি মুসলমানদের বিশ্ব—সম্মেলন হজ্জ পালন করার জন্য বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আল্লাহর ঘর তওয়াফ করার জন্য তারা মক্কা শরীফে আগমন করেন। আর তাই মুসলমানের মাঝে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

হজ্জের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, ভাবের আদান—প্রদান ও পরস্পরের মধ্যে প্রাণবন্ত শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

হজ্জে উঁচু বংশীয়, রাজা—প্রজা, মনিব—ভৃত্য সবাই একই ধরনের পোশাক পরিধান করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, ভেদাভেদের সব প্রাচীর তুলে দিয়ে সাম্যের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান প্রভুর বিধান পালন করে থাকে।

হজ্জ বৈষম্য দূরীকরণের এক বিধানসম্মত আন্তর্জাতিক কর্মসূচি। এটা মুসলিম মিল্লাতের মধ্যকার সব বর্ণ, গোত্র ও জাতিগত বৈষম্য দূরীভূত করে সবাইকে একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে সত্যের পথে অবিচল থাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করে।

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাশ্বত বাণীর বাস্তব চিত্র। হজ্জ মৌসূমে সম্মিলিত মুসলমানদের যবান থেকে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়,

‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা।’

এই লাব্বাইক ধ্বনির মাধ্যমে আল্লাহ্প্রেমিক মুসলমানরা বজ্রকণ্ঠে এ কথাই ঘোষণা করে, সব প্রশংসা আল্লাহর, সারা বিশ্বের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। আমরা তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁর বিধান মেনে চলব, ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে চলব।

মহান আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে যদি শত্রুর তরবারির আঘাতে আমাদের মাথা দ্বিখণ্ডিতও হয়, তবুও আমরা কুণ্ঠাবোধ করব না। কেননা, আমাদের ইবাদত, আমাদের জীবন—মরণ সবই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমার নামায, আমার ইবাদত (কুরবানি ও হজ্জ), আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব—জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে।’ -আনআম : ১৬২

হজ্জ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ঐক্য সম্মিলন, অন্য কোনো কারণে এত অধিকসংখ্যক মুসলমান কখনও একত্রিত হয় না।

হজ্জ কেবল ঈমানকে বলিষ্ঠ করে না, বরং এটা সমগ্র মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ করার পন্থা হিসাবেও কাজ করে। হজ্জের সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মিল, দৃষ্টিভঙ্গির মিলন এই প্রত্যেকটি জিনিসই মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ উন্নয়নে সাহায্য করে।

বিশ্বের সব এলাকার, সব বর্ণের, সব ভাষার এবং প্রশিক্ষণ ভৌগোলিক জ্ঞানের সীমা সম্প্রসারিত করে জাতীয়তার প্রাচীরকে করে নিশ্চিহ্ন। সৃষ্টি করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বিশ্বমানবতার মুক্তি ও উত্তরণে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সুদৃঢ়করণে, হজ্জের আবশ্যকতা সবচেয়ে বেশি। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান দুর্গতির অবসান ঘটাতে, আমাদের পবিত্র হজ্জ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

আরো জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইট রাহে সুন্নাত ব্লগ

যে মহিলা বে-পর্দা চলতে অভ্যস্ত তার জন্যও পর্দা আবশ্যক

বিবাহের পর কনে তুলে নেওয়ার আগে পর্দা রক্ষা করা কি জরুরী?

ডাক্তারের সামনে শরীর উন্মুক্ত করার শরয়ী বিধান কী?

রমযানুল মোবারক : অফুরন্ত কল্যাণের ভাণ্ডার

https://youtu.be/JzUwd-EUYW0

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.