ঈমানের সংজ্ঞা ও পরিচয় কী? আমাদের জবাব। Our Answer
ঈমানের সংজ্ঞা ও পরিচয় কী? আমাদের জবাব। Our Answer
ঈমানের সংজ্ঞা : আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে নবী (স) যত বিধান-আহকাম হাসিল
করেছেন এবং অকাট্য দলীল দ্বারা তা প্রমাণীত হয়েছে তার কোন একটি বাদ না দিয়ে
সবগুলোকে মনে প্রাণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস করা।
আল্লাহ্ তা’আলার আদেশ-নিষেধ সঠিকভাবে এবং পূর্ণভাবে আমল করার মাধ্যমে এ ঈমান কামিল বা শক্তিশালী হয়। আর আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনে ত্রুটি করলে ঈমান নাকেস বা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঈমানের নূর নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং তাওবা না করলে আল্লাহ্ না করুন ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কুফর এর সংজ্ঞা : আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যত
বিধান-আহকাম হাসিল করেছেন এবং অকাট্য দলীল দ্বারা তা প্রমাণিত হয়েছে তার কোন
বিষয় সম্বন্ধে অন্তরে সন্দেহ পোষণ করা,তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য
করা,ঠাট্টা মজা করা। উল্লেখিত কাজের দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে গেলে
তার পিছনের জীবনের সকল ইবাদত-বন্দেগী ও আমল নষ্ট হয়ে যায় এবং বিবাহিত হলে তার
বিবাহ বাতিল হয়ে যায়।
আল্লাহ্ না করুন এ অবস্থা কারো হলে তার জন্য জরুরী হল,নতুনভাবে কালেমা পড়ে তাওবা ইস্তিগফার করে ঈমান দোহরায়ে
নিয়ে বিবাহ দোহরায়ে নেয়া।
কুফ এর প্রকারভেদ : যদিও কুফরের বিভিন্ন প্রকার আছে তবে এর
প্রত্যেকটি দ্বারা মানুষ ঈমান হারা হয়ে কাফির ও বেঈমান হয়ে যায়। সুতরাং এ
সবগুলো থেকে বেঁচে থাকা ফরজ।
আল্লাহ এক,অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তাঁর কোনো শরীক নেই,তাঁর কোন কিছুর অভাব নেই। তিনিই সকলের সব অভাব পূরণকারী । তিনি কারো পিতা নন,পুত্রও নন,তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। একমাত্র তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। কোন জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তা’আলাকে আয়ত্ব করতে পারে না। তিনি চিরকাল আছেন এবং থাকবেন। তিনি অনাদি ও অনন্ত। সৃষ্টজীবের সাথে তাঁর কোন তুলনা হয় না। তাঁর অনেকগুলো অনাদি অনন্ত সিফাত বা গুণ আছে। সেগুলো একমাত্র তাঁর জন্যেই নির্ধারিত। সেসব গুণের মধ্যে অন্য কেউ শরীক নেই। যেমন,তিনিই সৃষ্টিকর্তা,রিযিকদাতা,হায়াত মওতদাতা,বিধানদাতা,গায়েব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। তিনি চিরঞ্জীব,তাঁর মৃত্যু নেই। অন্য সবকিছুই ক্ষয়শীল ও ধ্বংসশীল,কিন্তু তাঁর ক্ষয়ও নেই,ধ্বংসও নেই। সবকিছুর ওপর তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত। সবকিছুর ওপরই তাঁর ক্ষমতা চলে ।
তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সব-ই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি আগুনকে পানি এবং পানিকে আগুন করতে পারেন। তিনি সর্বজ্ঞ,তিনি না জানেন-এমন কিছুই নেই। মনের মধ্যে যে ভাবনা বা কল্পনা উদয় হয়,তাও তিনি জানেন। তিনি সবকিছুই দেখছেন। সবকিছুই শুনছেন। মৃদু আওয়াজ এমনকি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ আওয়াজও তিনি শুনেন। গাইবের বিষয় একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি ছাড়া আর কেউ গাইব জানেন না। এমনকি নবী-রাসূল, অলীও নন।আল্লাহ্ তা’আলাই একমাত্র হাযির-নাযির। তিনি ছাড়া আর কেউ হাযির নাযির নন। এমনকি নবী-অলীগণও নন। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। কোন পীর,ওলী,পয়গাম্বর বা ফেরেশতা তাঁর ইচ্ছাকে রদ বা প্রতিহত করতে পারেন না। তিনি আদেশ ও নিষেধ জারি করেন। তিনিই একমাত্র বন্দেগীর উপযুক্ত। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য হতে পারে না।
অন্য কারো
ইবাদত-বন্দেগী করা যায় না। তাঁর কোন অংশীদার কিংবা সহকর্মী বা উযীর নাযীর নেই।
তিনি একক কর্তৃত্বের অধিকারী । তিনিই সর্বোপরি বাদশাহ, রাজাধিরাজ; সবই তাঁর বান্দা ও
গোলাম। তিনি বান্দাদের ওপর বড়ই মেহেরবান। তিনি সব দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। তাঁর
মাঝে আদৌ কোন রকমের দোষ-ত্রুটি নেই। তাঁর ক্রিয়া-কর্ম, আদেশ-নিষেধ সবই ভালো ও মঙ্গলময়,কোন একটিতেও বিন্দুমাত্র অন্যায় বা দোষ নেই। তিনিই
বিপদ-আপদ দেন এবং বিপদ-আপদ হতে উদ্ধার করেন, অন্য কেউ কোন প্রকার বিপদ-আপদ হতে মুক্তি দিতে পারে না। প্রকৃত সম্মান ও
মর্যাদা তাঁরই। তিনিই সকল সম্মান ও মর্যাদার অধিপতি। তিনিই প্রকৃত মহান। একমাত্র
তিনিই নিজেকে নিজে বড় বলতে পারেন। এতদ্ব্যতীত অন্য কারো এ রকম বলার ক্ষমতা বা
অধিকার নেই।
তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করবেন। তিনি ক্ষমাশীল। তিনি অত্যন্ত পরাক্রমশালী। তাঁর প্রভাব ও প্রভুত্ব সকলের ওপর; কিন্তু তাঁর ওপর কারো প্রভাব বা প্রভুত্ব চলে না। তিনি বড়ই দাতা। সমস্ত জীবের ও যাবতীয় চেতন-অচেতন পদার্থের আহার তিনি দান করেন। তিনিই রুযীর মালিক। রুযী কমানো বাড়ানো তাঁরই হাতে। তিনি যার রুযী কমাতে ইচ্ছা করেন,তার রুযী কম করে দেন। যার রুযী বাড়াতে ইচ্ছা করেন,বাড়িয়ে দেন। কাউকে উচ্চপদস্থ বা অপদস্থ করার ক্ষমতা তাঁরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন।
এসব তাঁরই ক্ষমতায়, তাঁরই ইখতিয়ারে। অন্য কারো এতে কোন রকম ক্ষমতা বা অধিকার নেই। তিনি প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুসারে যার জন্যে যা ভালো মনে করেন, তার জন্যে তাই ব্যবস্থা করেন। তাতে কারো কোন প্রকার প্রতিবাদ করার অধিকার নেই।
তিনি ন্যায়পরায়ণ, তাঁর কোন কাজেই অন্যায় বা অত্যাচারের লেশমাত্র নেই। তিনি বড়ই সহিষ্ণু,অনেক কিছু সহ্য করেন। কত পাপিষ্ঠ তাঁর নাফরমানী করছে,তাঁর ওপর কত রকম দোষারোপ এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে,তারপরও তিনি তাদের রিযিক জারি রেখেছেন। তিনি এমনই কদরশিনাস গুণগ্রাহী এবং উদার যে,তাঁর আদৌ কোন প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করলে এবং তাঁর আদেশ পালন করলে,তিনি তার বড়ই কদর করেন এবং সন্তুষ্ট হয়ে আশাতীতরূপে পুরস্কার দান করেন। তিনি এমনই মেহেরবান ও দয়ালু তাঁর নিকট দরখাস্ত করলে [অর্থাৎ দু’আ করলে] তিনি তা মঞ্জুর করেন। তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত,তাঁর ভাণ্ডারে কোন কিছুরই অভাব নেই। তিনি অনাদি-অনন্তকালব্যাপী সকল জীব-জন্তু ও প্রাণিজগতের আহার যোগান দিয়ে আসছেন।
তিনি
জীবন দান করছেন,ধন-রত্ন দান করছেন,বিদ্যা-বুদ্ধি দান করছেন। অধিকন্তু আখিরাতেও অসংখ্য ও অগণিত
সাওয়াব ও নেয়ামত দান করবেন। কিন্তু তাঁর ভাণ্ডার তবুও বিন্দুমাত্র কমেনি বা কমবে
না। তাঁর কোন কাজই হিকমত ও মঙ্গল ছাড়া নয়। তিনিই সব কর্ম সমাধানকারী। বান্দা
চেষ্টা করবে,কিন্তু সে কর্ম সমাধানের ভার তাঁরই কুদরতী
হাতে ন্যস্ত।
তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামতের দিন পুনর্বার
সকলকে জীবিত করবেন। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। তাঁর হাকীকত ও
স্বরূপ এবং তিনি যে কত অসীম, তা কারো বোঝার
ক্ষমতা নেই। কেবলমাত্র তাঁর সিফাত অর্থাৎ গুণাবলী ও তাঁর কার্যাবলীর দ্বারাই তাঁকে
আমরা চিনতে পারি।
মানুষ পাপ করে যদি খাঁটিভাবে তাওবা করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। যে শাস্তির উপযুক্ত, তাকে তিনি শাস্তি দেন। তিনি হিদায়াত দেন। তাঁর নিদ্রা নেই।
সমস্ত বিশ্বজগতের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে তিনি বিন্দুমাত্রও ক্লান্ত হন না।
তিনিই সমস্ত বিশ্বের রক্ষক।
এ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলাকে চিনবার জন্যে তাঁর কতগুলো সিফাতে
কামালিয়া অর্থাৎ মহৎ গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া হলো। এতদ্ব্যতীত যত মহৎ গুণ আছে,আল্লাহ্ তা’আলা তৎসমুদয় দ্বারা বিভূষিত। ফলকথা এই যে,সৎ ও মহৎ যত গুণ আছে,অনাদিকাল
যাবত সে সব আল্লাহ্ তা’আলার মধ্যে আছে এবং চিরকাল থাকবে। কিন্তু কোন দোষ-ত্রুটির
লেশমাত্রও তাঁর মধ্যে নেই।
আল্লাহ্ তা’আলার ওপর ঈমান আনার অর্থ শুধু আল্লাহ্ তা’আলার
অস্তিত্ব স্বীকার করা নয়;বরং অস্তিত্ব স্বীকার করার সাথে সাথে তাঁর
উপরোক্ত গুণবাচক কথাগুলো স্বীকার করাও জরুরী। নতুবা আল্লাহ্ পাকের ওপর
সম্পূর্ণরূপে ঈমান আনা হবে না এবং সে ঈমান গ্রহণযোগ্যও হবে না।
আল্লাহ্ তা’আলার গুণ সম্বন্ধে কুরআন মজীদের এবং হাদীস
শরীফের কোন কোন জায়গায় এরূপ উল্লেখ আছে যে,তিনি
আশ্চর্যান্বিত হন,হাসেন,কথা বলেন,দেখেন,শুনেন,সিংহাসনাসীন হন,নিম্ন
আসমানে অবতীর্ণ হন। তাঁর হাত,পা,মুখ ইত্যাদি আছে। এসব ব্যাপারে কখনো বিভ্রান্তিতে পড়তে বা
তর্ক-বিতর্ক করতে নেই। সহজ-সরলভাবে আমাদের আকীদা ও একীন এই রাখা উচিত যে,আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্টজীবের মতো তাঁর ওঠা-বসা বা হাত-পা
তো নিশ্চয়ই নয়,তবে কেমন? তা আমাদের জ্ঞানের বাইরে।
প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ! সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!! যেন শয়তান
ধোঁকা দিয়ে গোলকধাঁধায় না ফেলতে পারে। একিনী আকীদা ও অটল বিশ্বাস রাখবেন যে,আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্টজীবের সাদৃশ্য হতে আল্লাহ্ তা’আলা
সম্পূর্ণ পবিত্র ও মহান।
এ দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চোখে কেউ আল্লাহ্ তা’আলাকে দেখতে
পারে নি। কখনো পারবেও না। তবে জান্নাতে গিয়ে জান্নাতীরা আল্লাহ্ পাকের দীদার লাভ
করবে। জান্নাতে এটাই সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামত হবে।
অমুসলিমরা কি নাপাক? আল কুরআনের ভাষায়
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
কোন মন্তব্য নেই