ইসলামের দৃষ্ঠিতে নামায। আমাদের জবাব। Our Answer
নামায মুমিন মুসলমানের বড় হাতিয়ার,
নামায ছেড়ে মানুষ শুধু করছে হাহাকার।
عَنْ ابْنِ عُمَرٌ (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ بُنِىَ الْاِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةِ اَنْ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهٗ وَاِقَامِ الصَّلٰوةِ وَ اِيْتَاءِ الزَّكَوَاةِ وَ الْحَجِّ وَ صَوْمِ رَمَضَانِ ـ متفق عليه
ইসলামের বিত্তি রাখা হয়েছে পাঁচটি জিনিসের ওপর— আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল— একথার সাক্ষ্য দেওয়া, নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা এবং রমযানের রোযা রাখা। —বুখারী ও মুসলিম।
মহান আল্লাহ জীন এবং ইনসানকে কেবলমাত্র ইবাদত বন্দেগী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর এই ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো নামায। নামাযে দুনিয়া ও আখেরাতে অসংখ্য ফায়েদা রয়েছে—
১. নামায পবিত্রতার অভ্যাস গড়ে তোলে;
২. নামায মানুষকে সময়ের পাবন্দ হওয়ার শিক্ষা দেয়;
৩. নামাযের দ্বারা সকালে সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস সৃষ্টি হয়;
৪. নামাযের বরকতে গুনাহ থেকে বাঁচা সহজ হয়;
৫. জামাতে নামায আদায় করার দ্বারা পরস্পরে ভালোবা সা সৃষ্টি হয়;
৬. নামায কবরে প্রদীপের কাজ দেয়;
৭. নামায আখেরাতের উত্তম পাথেয়;
৮. নামাযের দ্বারা দিলে প্রশান্তি সৃষ্টি হয়;
৯. নামাযের দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়;
১০. নামাযে অভ্যস্ত হওয়ার দ্বারা কেয়ামতের দিন সরওয়ারে আলম সা. এর শাফায়াত লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
নামাযই মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। নামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ। নামাযের ফযীলত ও গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে ইরশাদ হচ্ছে— وَأَقِيمُوا وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থাৎ, তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় তোমাদের দিক ঠিক কর। (সূরা আ’রাফ, আয়াত: ২৯)
الصَّلٰوةُ عِمَادُ الدِّيْنِ مَنْ اَقَامَهَا فَقَدْ اَقَامَ الدِّيْنِ وَ مَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ هَدَمَ الدِّيْنِ
অর্থাৎ, নামায হলো দীনের স্তম্ভ। সুতরাং যে নামাযকে কায়েম করল সে দীনকে কায়েম করল, আর যে নামাযকে তরক করল, সে দীনকে ধ্বংস করল।
জামে সগীর ও শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাকী ঃ ৪/৩০০ এ প্রসিদ্ধ আছে— اَلصَّلوٰةُ مِعْرَاجُ الْمُؤْمِنِيْنَ
অর্থাৎ, নামায মুমিনের মে’রাজ স্বরূপ।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে— إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই নামায সকল প্রকার নির্লজ্জ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)
আরও ইরশাদ হচ্ছে— وَاَقِيْمُوْا الصَّلَوةَ وَ اَتُوْا الزَّكَوةَ الخ.
অর্থাৎ, তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও। (সূরা বাকারা, আয়াত: ৩)
ইসলামে নামাযের চেয়ে বড় কোনো আমল নেই। একমাত্র নামায মানুষকে সর্বপ্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ হচ্ছে যে— الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
অর্থাৎ, যারা গায়েবের ওপর ঈমান আনে এবং নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা বাকারা, আয়াত: ৪)
ঈমানের পর সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আমল হলো নামায। নামায মহান রাব্বুল আলামীনের ফরয বিধান। আর মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নামায। তাইতো আল্লাহ পাক এদিকে ইঙ্গিত করে ইরশাদ করেছেন—
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ .
অথার্ৎ, আর দিনের দু’প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে এবং রাতের ও প্রান্তভাগে; পূণ্য কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়। (সূরা হুদ, আয়াত: ১১৪)
এমনিভাবে নামাযের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমের একটি নয় দুটি নয় ১০৯ জায়গায় সুস্পষ্টভাবে আর বাকী ৭০০ জায়গায় ইশারা ইঙ্গিতে নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আর নামায পড়তে গিয়ে এর সময়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে এভাবে— إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই নামায মুসলমানদের ওপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। (সূরা নিসা, আয়াত: ১০৪)
তাওহীদের পর প্রথম হুকুম ছিল নামাযের। নবুওয়াতের প্রথম যামানায় সূরায়ে মুদ্দাসসিরে ইঙ্গিতে নামাযের হুকুম দেওয়া হয়েছে। যেমন— ইরশাদ হচ্ছে— দাঁড়াও, ভীতি প্রদর্শন করো এবং তোমার রবের বড়ত্ব ঘোষণা করো। (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ২—৩)
উল্লেখিত আয়াত দ্বারা নামাযের গুরত্ব ও মাহাত্ম দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়।
এমনিভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযি. যখন কোনো সমস্যায় পড়তেন তখন তাঁরা নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে—
اِذَا فَزَعَهٗ اَمْرٌ بَادَرَ اِلٰى الصَّلٰوةِ ـ رواه البخَارِىْ
অর্থাৎ, যখন তাঁর কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন তিনি নামাযের দিকে ত্বরা করেন।
এমনিভাবে যাঁরা পূর্ণ খুশুখুযূ ও একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই বাণী—
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ . الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ .
অর্থাৎ, মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়—নম্র। (সূরা মু’মিনুন, আয়াত: ১—২)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে— وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ
অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে নামায যথেষ্ট কঠিন কাজ। তবে যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয়—ভীতি আছে তাদের পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। (সূরা বাকারা, আয়াত: ৪৫)
চাবি ছাড়া যেমন তালা খোলা অসম্ভব তেমনিভাবে নামায ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করাও অসম্ভব ব্যাপার।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلٰوةُ
অর্থাৎ, নামায বেহেশতের চাবি। —মুসনাদে আহমাদ।
আর কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসোব হবে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে— اَوَّلُ مَا يُحٰسَبُ بِه الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلٰوةُ
অর্থাৎ, কেয়ামাতের দিবসে সর্বপ্রথম নামাযের হিসেব নেওয়া হবে। (তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— جُعِلْتُ قُرَّةُ عَيْنِىْ فِىْ الصَّلٰوةِ ـ
অর্থাৎ, নামায আমার চোখের শীতলতা। (নাসায়ী শরীফ)
এখানেই শেষ নয়, নামাযের ফযীলত সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— যে ব্যক্তি ঠিকমত নামায আদায় করে, তার সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে যায়। জাহান্নাম তার জন্য হারাম হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন— নিয়মিত নামায আদায়কারীকে আল্লাহ তাআলা পাঁচটি পুরস্কার দান করবেন।
এক. রিজিকের অভাব দূর করে দিবেন।
দুই. কবরের আযাব মাফ করে দিবেন।
তিন. আমলনামা ডান হাতে দিবেন।
চার. পুলসিরাত বিদ্যুতের গতিতে পার করে দিবেন।
পাঁচ. বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আল্লামা ইকবাল বলেন—
یہ ایک سجدہ جسے گراں سمجھتا ہے ٭ ہزار سجدہ سے دیتا آدمی کو نجات
অর্থাৎ, এই একটি সেজদা যাকে তুমি কঠিন কনে করছ হাজার সেজদা থেকে মানুষকে নাজাত দেয়।
জনৈক ফাসীর্ কবি নামাযের ব্যাপারে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন—
مکن سستی درنماز پنجگا نہ ٭ فویل المصلین الذین
অর্থাৎ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উদাসীনতা ও অবহেলা প্রদর্শন করো না, কেননা ঐসব নামাযীদের ধ্বংস অনিবার্য, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফেল।
এমনিভাবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বর্ণনা করেও নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। তাই পরিশেষে আমি বলতে চাই, আসুন, আমরা নামায সম্পর্কে আরো জ্ঞান অর্জন করি এবং সে মতে মেহনত করে নামাযের প্রতি পূর্ণ যত্নবান হই এবং যে সমস্ত মানুষ নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে জানে না তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে নামাযের দিকে আনার চেষ্টা করি। তাহলেই সম্ভব হবে এই নিযার্তিত নিপীড়িত, বঞ্চিত, অধঃপতিত, অবহেলিত, মুসলিম মিল্লাতকে পুনজ্জীবিত করা। তাহলেই সমাজ ফিরে আসবে শান্তি শৃঙ্খলা, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ—সম্প্রীতি। ফিরে আসবে সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর যুগের মত সোনালী যুগ। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি হবে অর্জিত। পরিশেষে কবি নজরুল ইসলামের কবিতার মাধ্যমে আমার বক্তৃতার ইতি টানছি—
ঘুমাইয়া কাযা করেছি ফজর
তখনও জাগিনি যখন জোহর।
হেলায় খেলায় কেটেছে আসর
মাগরিবের ঐ শুনি আযান।
এখনও জামাতে আছে স্থান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরীত চিঠির ব্যাখ্যা PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন
মহানবী জগতের আদর্শ মহামানব। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
মানব জাতির মুক্তি ও কামিয়াবী সুরাতুল আসরের ৪ মূলনীতির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক
কোন মন্তব্য নেই